জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত নয়, টেকসই সংস্কারের দাবিকে সামনে রেখে সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সোমবার (১৯ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় মেন্দিবাগস্থ কর ভবনের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির সভাপতি আয়কর আইনজীবী সিরাজুল হুসেন আহমদ আলমগীর এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান শিপু অ্যাডভোকেট এর পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এম. শফিকুর রহমান, মুত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, মোঃ আবুল ফজল, সমর বিজয়ী সী শেখর, মোহাম্মদ আব্দুল আলীম পাঠান, মোঃ সফিকুল ইসলাম, সুব্রত কুমার রায়, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, কাউছার মাহমুদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, মওদুদ আহমদ, সৈয়দ আব্দুল হামিদ, সদরুল হাসান চৌধুরী, আ.স.ম মুবিনুল হক শাহীন, মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত নয়, টেকসই সংস্কার চাই”। বাংলাদেশের সংবিধানে ৯৩ (১) অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক ১২ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ নম্বর অধ্যাদেশ দ্বারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে “রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ” নামে দুইটি পৃথক বিভাগ করা হয়। ফলে রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগে চলে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বক্তারা আরও বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি তৈরী করা হয়। সেই পরামর্শক কমিটি কর বিশেষজ্ঞ, সিভিল সোসাইটি, ব্যবসায়িক সমিতি, আইনজীবী, সাবেক কর কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে একটি রিপোর্ট তৈরী করেন। তাহা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল পরামর্শক কমিটির রিপোর্ট আমলে নেওয়া হয়নি। অংশীজনদের সাথে পরামর্শ না করে গোপনে, তাড়াহুড়া করে গভীর রাতে অধ্যাদেশ জারি করে জনমনে উৎকন্ঠা তৈরী করেন। এর আগেও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক রাজস্ব প্রশাসন ও নীতি প্রণয়নে কার্যক্রম গ্রহণ পূর্বক একটি আদেশ জারী করা হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২০০৯ সালে পরবর্তী সরকার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল বা স্থগিত না করে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে। আমরা মনে করি রাজস্ব গতিশীল করার জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দুর্নীতিমুক্ত ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিশ্চিতপূর্বক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশকে উপেক্ষা করে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ দুটি বিভাগে পরিণত করা হয়েছে, যা কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম থেকেই যাচ্ছে। যা রাজস্ব বোর্ডের আন্ত:ক্যাডারদের মধ্যে মারাত্নক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত না করে সংস্কার যেমন- (আপিলাত যুগ্ম কর কমিশনারকে নিরপেক্ষ রাখা, ট্রাইবুনালকে নিরপেক্ষ রাখা, কর কমিশনার (আপিলাত) কর অঞ্চলে নিয়ে আসা, করদাতাদের হয়রানী না করা, কর ন্যায়পাল নিযুক্তি, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রনে আসা, দক্ষ, যোগ্য লোককে দায়িত্ব প্রদান করাসহ আরও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রতিষ্ঠিত করা। অবিলম্বে অধ্যাদেশটি জনস্বার্থে বাতিল করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী ও টেকসই সংস্কার করতে হবে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় রাজনৈতিক প্রভাব ও নির্বাহী বিভাগ থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাজস্ব বোর্ড গঠনের দাবী জানান বক্তারা।
বক্তারা অবিলম্বে অধ্যাদেশ বাতিল করত: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত না করে টেকসই সংস্কার এর জোর দাবী জানান।