২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বেকারত্ব, সতর্ক করলেন এআই কোম্পানির প্রধান
ডেক্স :: দ্রুত উন্নত হতে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতেই ব্যাপক হারে বেকারত্ব সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এআই কোম্পানি অ্যানথ্রপিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডারিও আমোডেই। তাঁর মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ শতাংশ চাকরি বিলুপ্ত হতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
আমোডেই বলেন, ‘এআই এখন প্রায় সব বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে মানুষের চেয়ে ভালো হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় আমাদের সমাজ হিসেবে এর মুখোমুখি হতে হবে।’
তিনি জানান, আগামী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সাদা কলারের (অফিসভিত্তিক) প্রায় অর্ধেক এন্ট্রি-লেভেল বা প্রারম্ভিক পর্যায়ের চাকরি বিলুপ্ত হতে পারে। এতে বেকারত্ব বেড়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা করোনা-১৯ মহামারির সময়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এআই নিয়ে উদ্বেগ নতুন নয়। তবে আমোডেইর সতর্কতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এসেছে এক শীর্ষ এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবও ব্যাপক।
অ্যানথ্রপিক সম্প্রতি এমন একটি এআই মডেল উন্মোচন করেছে, যা টানা সাত ঘণ্টা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারে।
সাধারণত প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যেসব চাকরি বিলুপ্ত হয়, তাতে কর্মীদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দিয়ে উচ্চমানের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া যায়। তবে আমোডেই বলছেন, এবার এমন অনেক বিশেষায়িত চাকরি বিলুপ্ত হবে, যেগুলোর জন্য বহু বছর ধরে ব্যয়বহুল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়—আর ওই কর্মীদের সহজে নতুন চাকরিতে পুনঃপ্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন হবে।
আমোডেই এমনকি এআই কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপ করার কথাও বলেন, ‘এআই যদি বিপুল সম্পদ তৈরি করে, সেটি মূলত কোম্পানিগুলোর কাছেই যাবে, সাধারণ মানুষের কাছে নয়। তাই কর আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এটি কোনো পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক বিষয় হওয়া উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তাদের মডেল ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষ এআইকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে ৪০ শতাংশ মানুষ পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণের জন্য ব্যবহার করছে এবং এ হার দিনে দিনে বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আইনজীবীদের সহকারী, বেতন হিসাবরক্ষক, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি, আর্থিক উপদেষ্টা ও কোডারদের কাজ সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়তে পারে।
মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেন, আগামী বছর কোম্পানির অর্ধেক কোড এআই দিয়ে লেখা হবে। মাইক্রোসফট সিইও সত্য নাদেলাও জানান, বর্তমানে তাদের ৩০ শতাংশ কোড এআই দিয়ে রচিত হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৪১ শতাংশ কোম্পানি এআই প্রযুক্তির কারণে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে।
আমোডেই বলেন, ‘মানুষ অতীতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তবে সবাই বলছে, এবারের পরিবর্তন দ্রুত, বিস্তৃত এবং মানিয়ে নেওয়ার জন্য কঠিন।’
তবে কেউ কেউ বলছেন, এআই হয়তো পুরো চাকরি নয়, বরং নির্দিষ্ট কাজ স্বয়ংক্রিয় করবে—যাতে মানুষ অন্য জটিল কাজের জন্য সময় পাবে। তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ একমত যে, এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
ভার্জিনিয়ার ইউনিভার্সিটি অব বিজনেসের অধ্যাপক আন্তন কোরিনেক বলেন, ‘মানুষ ভাবে, ‘‘অর্থনীতি নতুন চাকরি তৈরি করে’’—এটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য ছিল। তবে এবার বুদ্ধিমান যন্ত্র নতুন চাকরিও করতে পারবে এবং আমাদের চেয়ে দ্রুত শিখবে।’
অবশ্য আমোডেই মনে করেন, এআই প্রযুক্তি রোগ নিরাময়সহ অনেক ভালো কাজেও ব্যবহার হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস না করলে এই প্রযুক্তি তৈরি করতাম না যে এটি পৃথিবীকে ভালো করতে পারে।’
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ট্রেসি ফেলোস বলেন, আমোডেই এই সতর্কতা শুধু সতর্কতাই নয়, এটি শিল্পজগতে তার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেও সাহায্য করবে।
ফেলোস আরও বলেন, ‘যদি তিনি (আমোডেই) বলেন ২০ শতাংশ বেকারত্ব হবে এবং কেউ এর উন্নয়ন বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে অ্যানথ্রপিক দায়ী থাকবে না—কারণ তারা আগেই সতর্ক করেছে।’
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে আমোডেই বলেন, ‘এই অগ্রগতি থামানো যাবে না। তবে আমি চাই প্রযুক্তি যেন এমন পথে এগোয়, যেখানে আমরা ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হই, তা মোকাবিলা করি এবং উপকারের সুফল পাই।’