সুনির্মল সেন:: ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডে অবস্থিত প্রাচীন একটি বাড়ি ভাঙছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এই বাড়িটি কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায়ের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
১৯৮৯ সাল থেকে এই ভবনটি শিশু একাডেমির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ২০০৭ সালের পর তা কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ভবনটি ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে শিশু একাডেমি।
তবে বিষয়টি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছে। শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে ভবন ভাঙার নথিপত্র চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন।
তিনি জানান, “এটি রায় পরিবারের ঐতিহাসিক বাড়ি। যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়, তবে আমাদের জরিপে এ ধরনের শতবর্ষী স্থাপনাগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা চাই বাড়িটি রক্ষা পাক।”
স্থানীয় গবেষক স্বপন ধর জানান, এই বাড়িটি হরিকিশোর রায় ও তাঁর বংশধরদের সঙ্গে সম্পর্কিত। মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হরিকিশোরদের পরিবার এই ভবনে বসবাস করতেন। তিনি বলেন, “স্থাপত্যশৈলী দেখে বোঝা যায়, বাড়িটি ১৭৮৭ সালের পর নির্মিত। এটি একাধিকবার মালিকানা পরিবর্তন হয়ে শেষ পর্যন্ত রণদা প্রসাদ সাহার মালিকানায় আসে।”
স্থানীয়দের মতে, ভবনটি অনেক আগেই সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে হয়তো রক্ষা করা যেত। তবে এখন ভবনটির মূল অবকাঠামো অনেকটাই ধ্বংসপ্রায়।
ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মেহেদী জামান বলেন, “২০০৭ সালের পর থেকে ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। ভাড়াবাসায় কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল। ঝুঁকির কারণে ভবনটি মেরামত সম্ভব হয়নি। যথাযথ অনুমতি নিয়েই ভবনটি ভাঙা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এখানে আপাতত একটি আধাপাকা স্থাপনা হবে, ভবিষ্যতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।”
ভবনটি ভাঙার খবরে প্রত্নতত্ত্বপ্রেমী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভবন সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
তবে গবেষক স্বপন ধর বলেন, “বর্তমান অবস্থায় হয়তো ভবনটি রক্ষা করা সম্ভব নয়। তবে ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের মূল রূপরেখা বজায় রেখে নতুন ভবন তৈরি হলে সেটাই হবে সম্মানজনক।”