সুনির্মল সেন: সিলেটের আলোচিত চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যা মামলার আসামি এসআই আকবর জামিন পেয়েছেন। ছেলে হত্যার প্রধান আসামী জামিনে বেরিয়ে আসছে এমন সংবাদ শুনে আদালত প্রাঙ্গনে রায়হানের মা কান্নায় বিলাপ করতে থাকেন। তার চোখের জল দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এটা কিভাবে সম্ভব আকবরের জামিন? জামিনের মতো এমন ঘটনা নিয়ে সারা সিলেটে এখন চলছে আলোচনার ঝড়।
রোববার (১০ আগস্ট) পুলিশের বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হন ।সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ডেপুটি জেলার মনিরুল হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত হয়ে জামিনের কাগজ গতকাল রোববার আমাদের কাছে পৌঁছায়। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার বিকেলেই এসআই আকবরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার দিকেই তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে তিনি বেরিয়ে যান।
ইতোপূর্বে এসআই আকবর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর কার্যক্রম শুরু হলে ২৫ মার্চ আকবরকে এখানে আনা হয়। জামিনে মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি এই কারাগারেই ছিলেন।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ- পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়েছিলো।
এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৪ জনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।